আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস তবে কন্যাশিশুরা কতটা নিরাপদ?
নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস তবে কন্যাশিশুরা কতটা নিরাপদ?শনিবার (১১ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২৫। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে নানা আলোচনা হচ্ছে। তবে উৎসব বা প্রতিপাদ্যের বাইরেও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দেশে কন্যাশিশুরা আদৌ কতটা নিরাপদ?
জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি প্রতি বছর পালনের মূল উদ্দেশ্য— কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং লিঙ্গবৈষম্য দূর করে তাদের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: “The Girl, I Am, The Change Lead: Girls on the Frontlines of Crisis” অর্থাৎ ‘আমি সেই মেয়ে, আমি-ই পরিবর্তনের নেতৃত্ব; সংকটে কন্যারা সম্মুখসারিতে।
২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দিবসটি পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালিত হয় ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর। আর প্রথম বছরই এর থিম ছিল, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা। কিন্তু দিবসটি পালনের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। বরং বছর ঘুরলেই বাড়ছে সহিংসতা ও নির্যাতনের সংখ্যা।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসেই কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৩টি কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫০টি, আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে। বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৮১ জন কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এছাড়া বহু কন্যাশিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত ও বাল্যবিবাহের মতো নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৯০ কন্যাশিশু। অথচ ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২২৪ জন। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৯টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। তবে তার মধ্যে কন্যাশিশু নির্দিষ্টভাবে কত, সে হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মাত্র নয় মাসে ৪৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ জনের বয়সই ছয় বছরের নিচে। এই ভয়াবহ চিত্র দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে মূলত বিচারহীনতার কারণে। অপরাধীরা শাস্তি না পেয়ে বারবার একই অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে।
একদিকে রাষ্ট্র কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলছে, অন্যদিকে প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা ভরে উঠছে তাদের ওপর ভয়ংকর সহিংসতার খবরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু দিবস পালন নয়, কন্যাশিশুদের বাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিচারপ্রক্রিয়া গতিশীল করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার এবং সমাজজুড়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
No comments