পাহাড়ে নেমে এলো শোকের ছায়া। - বাংলাদেশ দর্পণ
বান্দরবান প্রতিনিধি: সুকেল তঞ্চঙ্গ্যা.
বান্দরবান পার্বত্য জেলার উজ্জ্বল নক্ষত্র, সমাজে সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, সংগঠক এবং তঞ্চঙ্গ্যা জাতির মহান অভিভাবক। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, বান্দরবান রেইছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার সাবেক সভাপতি শ্রীযুক্ত বাবু প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা গত ২৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এতে পাহাড়ে নেমে হলো শোকের ছায়া।
তিনি ছিলেন প্রবীণ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং পাহাড়ী_বাঙালির খুবই শ্রদ্ধাভাজন একজন ব্যাক্তি।
পারিবারিক তথ্য মতে, তিনি মূলত হেপাটাইটিস বি এর রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে ডাক্তার রা দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণে ইউনিট (আইসিইউ) তে নিয়ে যান। পরে সেখানে ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরও সৃষ্টিকর্তার ঢাকে সারা দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ঠিক তার পরের দিন ২৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬:০০ ঘটিকায়।
শ্রীযুক্ত বাবু প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা-র জন্ম: ১৯৫৩ সালের ১৬ নভেম্বর। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তিনকোনিয়া এলাকায়। তারা ছিলেন তার ভাই, চার বোন। পরে কাপ্তাই বাঁধ নির্মিত হলে তাদের জমিজমা ও বসতবাড়ি হাড়িয়ে তারা চলে আসেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার রেইছা ইউনিয়নে। পরে সেখানে তাহার বাবা বাবু সাতকমল তঞ্চঙ্গ্যার নামে গড়ে উঠে সাতকমল পাড়া পরে সেখানে তাদের বসবাস শুরু হয়।
তিনি তরুণ বয়সে জনসংহতি সমিতিতে যোগদান দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ক্যাপ্টেন দুর্জয় নামে সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। পরে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৮৯ সালের বান্দরবান পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের তঞ্চঙ্গ্যা আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন শ্রীযুক্ত বাবু প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
এরপরে ১৯৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অবস্থায় আততায়ীদের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বান্দরবান-৩০০নং আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ২০১৪ সালে দলীয় আন্ত:দলীয় কোন্দলের কারণে সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী ও সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন।
তিনি ছিলেন তিনি সন্তানের জনক। বড় ছেলে মিকন তঞ্চঙ্গ্যা (উপসচিব) বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত রয়েছেন। মেজ ছেলে ব্যাবসায়ী এবং ছোট ছেলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু অবস্থায় রয়েছেন। তার বড় ছেলে দেশে ফেরার পর আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রেইছা সাতকমল পাড়ার শ্বশানে দাহক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তিনি মৃত্যু কালে স্ত্রী, তিন ছেলের দুই পুত্রবধূ সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গিয়েছেন।
একজন মহৎ জননেতা নিবেদিত প্রাণ সমাজসেবক ও তঞ্চঙ্গ্যা জাতির অগ্রযাত্রার অক্লান্ত সংগ্রামী কে জাতির কল্যাণ, শিক্ষার প্রসার সামাজিক ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশে তাহার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
No comments