নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা জঙ্গী কর্তৃক এক তঞ্চঙ্গ্যা নারী কে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ।
বান্দরবান প্রতিনিধি: সুকেল তঞ্চঙ্গ্যা।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১৬৮নং রেজু মৌজাধীন ঘুমধুম ইউনিয়ন ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হাতিমারা পাড়া নামে এক গ্রামে এক তঞ্চঙ্গ্যা নারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের কর্তৃক ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ১২ নভেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় আনুমানিক ৫:৩০ ঘটিকার দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সশস্ত্র সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এই ধর্ষণের চেষ্টা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নারীর স্বামী হাতিমারা পাড়ার মৃত লংবু অং তঞ্চঙ্গ্যা বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐদিন বিকেলে ওই ভুক্তভোগী নারী তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাজার থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জামিরতলী খাল পেরিয়ে পাহাড়ের রাস্তা হাঁটার পথে হঠাৎ (আরএসও) এর ১০-১৫ জনের একদল সদস্য তাকে আটকায় এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করতে থাকে।
এমন সময় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া ৮-১০ জন জুম্ম যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ওই তঞ্চঙ্গ্যা নারী সম্ভাব্য ধর্ষণ থেকে রক্ষা পায়। জুম্ম যুবকরা ওই নারীকে আটকিয়ে রাখা লোকদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা (আরএসও) এর সদস্য এবং তারা ৩৪ বিজিবি কমান্ডারের নির্দেশে সেখানে অবস্থান করছেন বলেও জানা যায়।
এরপর জুম্ম যুবকরা ওই তঞ্চঙ্গ্যা নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। সাথে সাথে জুম্ম যুবকরা ঘুমধুমের ৯নং ওয়ার্ডের চৌকিদার রূপন বড়ুয়াকে ওই নারীর বিষয়টি জানালে, চৌকিদার রূপন বড়ুয়া ওই (আরএসও) এর সদস্যরা তার লোক এবং তাদের বিষয়ে বেশি কিছু না বলে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এক গোপনীয় সূত্রে জানা যায়, চৌকিদার রূপন বড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি কমান্ডারের সাথে যোগসাজশে এবং (আরএসও) সদস্যদের মাধ্যমে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ করেছে। এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে রূপন বড়ুয়ার পরিচিতি রয়েছে। তার বাড়িতে একসময় নিয়মিত ৩-৪ জন (আরএসও) সদস্য থাকতো বলেও জানা যায়।
স্থানীয় জুম্মরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য এবং ডাকাতদের তৎপরতার কারণে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানান তারা। অতি শীঘ্রই যদি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া না যায় তাহলে এলাকার পরিস্থিতি আরো দিন দিন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাসরুরুল হক বলেন, আমি এ বিষয়ে কিচ্ছু জানি না। কারণ ভিকটিম এর পরিবার এখনো থানায় এ বিষয়ে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। ভিকটিম এর পরিবার যদি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাহলে আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার।
উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর ২০২৫ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সংলগ্ন গর্জন বনিয়া থেকে সুমন তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক জুমচাষীকে এবং গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ঘুমধুম ইউনিয়নের ভালুকিয়া থেকে ওয়ামং তঞ্চঙ্গ্যা নামে আরেক গ্রামবাসীকে অপহরণ করে আরএসও ও আরসা জঙ্গীরা।
ওই গ্রামবাসীদের এখনো পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলেও জানা যায়। সেই ঘটনার পেছনেও চৌকিদার রূপন বড়ুয়ার হাত রযেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জুম্মরা।চৌকিদার রূপন বড়ুয়া মিয়ানমারের সিগারেট ও ইয়াবা ব্যবসার পরিচালক বলেও খবর পাওয়া যায়।
আরো উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ মে ২০২৪ তারিখে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং নাফ নদ ৫ নম্বর স্লুইসগেট এলাকা থেকে ছৈলা মং চাকমা (২৯) ক্যমংখো এ তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) নামে দুইজন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে রোহিঙ্গা জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক অপহরণ করা হয় বলেও খবর পাওয়া যায়।

No comments