নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অটোচালকদের হামলা, আহত ২০ - বাংলাদেশ দর্পণ
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। মোঃ ওয়াকিল আহমেদ।
নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়কে প্রবেশসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকরা নগর ভবনে হামলা চালিয়েছে। হামলায় উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। আহতদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সামনে মানববন্ধন করছিল অটোরিকশা চালকরা। মানববন্ধন থেকে হঠাৎ করেই সশস্ত্র অবস্থায় তারা সিটি করপোরেশনের ভেতরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে করপোরেশনের কর্মচারীদের আহত করে। ঐ সময় নগর ভবনের নিচতলায় ভাঙচুর করা হয়। দুপুর আড়াইটায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পরবর্তী দেড় ঘন্টা নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে।
অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা দাবিদার মাজহারুল ইসলাম জোসেফের অনুসারিরা ঐ হামলার সঙ্গে জড়িত। হামলাকারীদের শান্ত করতে বাধ্য হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জোসেফকে টেলিফোনে নগর ভবনে ডেকে নেন। এরপর তিনি গিয়ে হামলাকারীদের শান্ত করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জোসেফ হামলাকারীরা তার অনুসারি নয় দাবি করে বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলতে পারে। ঘটনার সঙ্গে কোন ভাবেই আমার কোন যোগসূত্র নেই।
সিটি করপোরেশনের স্টাফদের দাবি হামলাকারীদের হাতে দেশিয় তৈরী বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ছিল। ঐ সময় হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তাদের উপর হামলা করা হয়।
হামলায় আহতদের মধ্যে, সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম, যানজট নিরসন কর্মী শামসুন নাহার শিমলা, মুহিন, সাগর, রাতুল, সিয়াম, শাওন, লিটন, পলাশের নাম জানা গেছে।
গ্রীণ এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জের অংশ হিসেবে ও শহরে যানজট নিরসনে গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে মূল শহরে অটোরিকশা চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। শহরের প্রবেশ পথগুলোতে অনুমোদনহীন অটোরিকশা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এদিকে বিগত কয়েকমাস যাবৎ শহরে অবাধ প্রবেশাধিকার চেয়ে আন্দোলন করছিল অটোরিকশা চালকরা। এর আগে চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ ও নগরভবন ঘেরাওয়ের মত কর্মসূচি পলন করেছে তারা।
সোমবার দুপুরে অটোচালকরা নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন আয়োজন করে। মানববন্ধন থেকেই এক পর্যায়ে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নগর ভবনে হামলা চালায়।
হামলায় আহত যানজট নিরসনে কর্মরত ছাত্ররা জানায়, অটো চালকরা বিভিন্ন দাবিতে নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা তাদের উপর চড়াও হয় এবং এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
তারা আরো জানায়, হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় অটো চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও সিটি কর্পোরেশনের স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অটোচালকদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের যানজট নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম তাদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে। একারণে অটো চালকরা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। মানববন্ধন চলাকালে সম্রাট অটোচালকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিলে ক্ষুব্ধ চালকদের কেউ কেউ তার উপর চড়াও হয়। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালায় এবং আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারী, যানজট নিরসনে দায়িত্বরত ছাত্রদের উপর হামলা করে।
সদর মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তারা হামলায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments