বরিশালে আলোচিত সেই ডাঃ মুন্সী মুবিন গড়ছেন সম্পদের পাহাড়
মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ গড়েছেন বরিশাল থেকে কুয়াকাটা।ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ।সরকারি পদ পদবীকে বানিয়েছেন আলাদিনের চেরাগ।অবৈধ সম্পদ,টাকা আর বাড়ি গাড়িতে ফুলে ফেপে উঠেছেন তিনি।কাউকে তিনি থোরাই কেয়ার করেন না। টাকার গরমে দম্ভোক্তি করে বলেন,সবাই আমার লোক।মাসিক ও বাৎষরিক মাসোহারা দেই। জামাতের লোক হলেও আওয়ামীলীগের নেতারা নাকি তার কথায় ওঠাবসা করে। বলছি বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক সার্জন ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হকের কথা।
মাসিক বেতনে রোগীধরা দালাল পোষেন তিনি।দালাল প্র্যাক্টিস করে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক। হোটেল -মোটেল,ক্লিনিক,হাসপাতাল,দোকানসহ সম্পদ গড়ে তুলেছেন ।এক যুগ ধরে একই কর্ম স্থলে থাকার সুবাদে দালাল নির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ,ক্লিনিক ও বেতনভুক্ত দালালদের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে অপারেশন করেন।
দীর্ঘ সময় একই কর্মস্হলে চাকরীর নেপথ্যে রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার,সরকারি অর্থ লোপাট ও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড। কয়েকবার বদলীর আদেশ আসলেও প্রতিবারই বিচক্ষণতায় তা ঠেকানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন তিনি।এভাবেই অবৈধ টাকা অর্জনে অনেক দুর এগিয়ে গেছেন দূর্নীতির এই স্বপ্নবাজ।
ডাঃ মুন্সী মুবিনের যত সম্পদ:
বরিশালে শশুর বাড়ি হওয়ায় নামে বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। বরিশালের মুন্সী গ্যারেজ নামক স্থানে দালাল নির্ভর প্র্যাক্টিসের জন্য দুটি ফ্লোর ভাড়া করেছেন। বসবাস করছেন বরিশাল নগরীর শহীদ মজিবর রহমান সড়কে নিজ বাস ভবন স্বর্না ক্যাসেলে।তার বাস ভবন খুলনার কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের স্বর্ন মহলের চেয়েও জৌলুসময়।শান শওকতে হার মানিয়েছে রাজ প্রসাদও।
ক্রয় করেছেন নগরীর ফরিয়াপট্রিতে দোকানসহ জমি।বগুড়া -আলেকান্দা মৌজায় রয়েছে একটি প্লট।কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল,ঢাকায় ফ্লাট,ঝিনাইদহে নামে বেনামে জমি ক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে ডাঃ মুবিনের বিরুদ্ধে।বিপুল পরিমান অর্থ,ব্যাংকে এফডিআর এবং নামে বেনামে সম্পদ করেছেন অর্জন । এ যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। একের পর এক বেরিয়ে আসছে ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হকের অবৈধ সম্পদের খবর। একজন সরকারি ডাক্তার হয়ে মুন্সী মুবিন কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডাঃ মুন্সী মুবিনের অবৈধ সম্পদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করলেই হাজার কোটির চেয়েও বেশী সহায় সম্পদের তথ্য প্রকাশ পাবে যা জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ।
যেভাবে অর্থ আদায় করেন :
রোগীদের জিম্মী,ভুল চিকিৎসা ও অপারেশনের নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে। সরকারি অফিস ফাঁকি দিয়ে দু হাতে কামাই করছেন টাকা।প্রায় এক যুগের মত বরিশালে।অদৃশ্য ইশারার কারনে বদলী হয়না তার।বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হলেও গাইনীসহ সব রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যেন তিনি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক সার্জন হওয়ার কারনে তাকে নিয়ে কেউ কথা বলেনা।পদকে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করে বরিশাল নগরীর মোকলেসুর রহমান ক্লিনিক ও বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চেম্বার করেন। করেন এ দু’টি প্রতিষ্ঠানে রোগীদের অপারেশন। অসংখ্য লোক মুন্সি মুবিনের হাতে মৃত্যু হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। সম্প্রতি বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে সুমাইয়া নামে এক রোগী ও নবজাতক মারা গেলে বরিশালে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া নিহত সুমাইয়ার স্বামী আব্দুল্লাহ আল আমান স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়,স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন,টাকার বিনিময়ে বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক সার্জন মুন্সী মুবিনুল হক পার পেয়ে যান। হোক হত্যা কিংবা কোন অনিয়মের অভিযোগ। সব সময়ই অঘটনের পরে প্রভাবশালীদর সঙ্গে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার ফলে মুন্সী মুবিনুল হক বেপরোয়া হয়ে গেছেন।তার বিরুদ্ধে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইনজীবী কাওসার হোসেন বলেন,বাংলাদেশে দুর্নীতির যে কোনও অভিযোগের বিচার হয় ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী। এই আইনে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচার করা হয়।আইনটিতে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ধারায় বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় কোনও ব্যক্তির নিজ নামে বা তার পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তির নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দখলে রয়েছে বা মালিকানায় রয়েছে যেটি তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ- তাহলে সেটি তদন্তের আওতায় আসবে।এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম সাজা তিন বছরের কারাদণ্ড। এছাড়া অর্থদণ্ড এবং ওইসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধানও রয়েছে এই আইনে।এছাড়া সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছরের কারাদণ্ড।
এ ব্যাপারে ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হকের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।হোয়াটএ্যাপসে ম্যাসেজ দেয়া হলে ম্যাসেজ সিন করেও কোন উত্তর প্রদান করেন নি।
উল্লেখ্য,বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে গত ৯ এপ্রিল’২৪ তারিখ অপ- চিকিৎসা ,ভুল অপারেশন ও দুজন ডাক্তারদের অবহেলায় সুমাইয়া নামে এক রোগীর মৃত্যুর কারনে দায়িত্বরত বরিশাল জেনারেল (সদর )হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক সার্জন ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে ওই মৃত রোগী সুমাইয়ার স্বামী আব্দুল্লাহ আল আমান স্বাস্থ্য সচিব,পরিচালপরিচালক ও বরিশালের সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত আবেদন করেছেন ৬ মে’২৪ ইংরেজী তারিখ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডস্থ বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ছাড়াও ডাঃ মুন্সী মুবিনের হাতে সিএন্ডবি রোডস্থ সেন্টাল হসপিটালে রোগীর মৃত্যু ঘটে।এছাড়া সদর রোডস্থ মোকলেসুর রহমান ক্লিনিকেও মৃত্যু হয় তার হাতে। ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বরিশালে বর্তমান কর্মস্থলে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন।
No comments