বেতাগীতে নন্দিনী কর্ণার’ আতঙ্কে ৩৬ ছাত্রী অসুস্থ, স্কুল বন্ধ ঘোষণা
বাংলাদেশ দর্পন ডেস্কঃ বরগুনার বেতাগী উপজেলায় দুই দিনে দুটি স্কুলের অন্তত ৩৬ জন ছাত্রী অজানা এক আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, স্কুলের নন্দিনী হাউজিন কর্নারের ঢুকে ভয় আর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। ভীতসন্ত্রস্ত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, নন্দিনী হাউজিন কর্নার কক্ষে ঢুকে কক্ষের ভেতর ‘অদ্ভুত কিছু আছে’ — এমন অনুভূত হয়েছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) একটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নন্দিনী
কর্নারের সাইনবোর্ডও।
তবে চিকিৎসকের ধারণা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে ওই ছাত্রীদের এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এদিকে এ ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এমনটি ঘটেছে উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী জলিশাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বুধবার ( ১৫ মে) হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন স্কুলের নন্দিনী হাউজিন কর্নার কক্ষে প্রবেশের পর সুমি, হাবিবা, মরিয়ম, সুমাইয়া, তাসমিয়া, সাজন, সিনহা জাহান, উস্মিতা, কুলসুম, চাঁদনী আক্তার, জান্নাতি আক্তার ও আরিফাসহ অন্তত ২৪ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আগের দিন মঙ্গলবার একইভাবে অসুস্থ হয় আরও আট ছাত্রী। কক্ষে প্রবেশের পর সেখান থেকে বের হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় শিক্ষকদের সঙ্গে কান্নাকাটি করতে থাকে তারা। দুই দিনের এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অন্য ছাত্রীদের মধ্যেও। ওই কক্ষে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তারা।
জানা যায়, এ ঘটনায় দশম শ্রেণির মারজিয়া আক্তার জিদনী ও নবম শ্রেণির শারমিন রিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
আর অসুস্থ হয়ে পড়া বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অভিভাবকদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে এ পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে খুলে নেওয়া হয়েছে নন্দিনী কর্নারের সাইনবোর্ড। অসুস্থদের কেউ কেউ বলছে, ওই সাইনবোর্ড দেখেও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
পার্শ্ববর্তী জলিশাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সেখানকার চার শিক্ষার্থী একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২০২০ সালের মার্চে বরগুনার ৩০৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘নন্দিনী হাইজিন কর্নার’ চালু করে জেলা প্রশাসন। এ কর্নারে একটি বাক্সে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্যানিটারি ন্যাপকিন, ফার্স্ট এইড, আয়রন বড়ি রাখা থাকে। এছাড়া থাকার কথা একটি ঢাকনাওয়ালা ঝুড়িও। হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নন্দিনী কর্নারে ঢুকে দেখা যায়, কক্ষের এক পাশে একটি খাট রাখা। এতে তোষক, চাদর ও বালিশ পাতানো রয়েছে। পুরো মেঝেতে প্লাস্টিকের মেট বিছানো। এক পাশে ছোট একটি ঝুরি। কক্ষটির জানালা দিয়ে দিনের বেলায় যথেষ্ট আলো প্রবেশ করে।
জানা যায়, গত রমজানে স্কুল বন্ধ ছিল। স্কুল খোলার পর গত সপ্তাহে খোলা হয় কক্ষটি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার প্রথমে সেখানে ঢুকে কয়েকজন ছাত্রী ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরদিনও ঘটে একই ঘটনা।
অসুস্থ একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নন্দিনী কর্নার কক্ষে ঢুকতেই কালো, সাদা ও লাল বিড়ালের দাগসহ নানা সিম্বল দেখতে পায়। এছাড়া কক্ষের ভেতরে ‘অদ্ভুত কিছু আছে’ — এমন অনুভূত হয় বলে দাবি করে তারা। এতে জ্ঞান হারায়।
শিক্ষকরা বলছেন, পুরোটাই ছাত্রীদের কল্পনাপ্রসূত বিষয়। সেখানে এমন কিছুই নেই। যার ফলে এভাবে কারও অসুস্থ হওয়ার কথা নয়।
হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক নান্না মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নন্দিনী কর্নারে ছাত্রীরা প্রবেশ করতেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা নাকি ঐ কক্ষে কালো বিড়াল, সাদা বিড়াল, লাল দাগসহ বিভিন্ন সিম্বল দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আসলে সেখানে ওইসব কিছুই নেই।’
পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তাই একদিনের (বৃহস্পতিবার) জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে এমনটি হতে পারে জানিয়ে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘অসুস্থ ছাত্রীরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন- এমনই ধারণা করছি। তাই অসুস্থ ছাত্রীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টা অবাক করার মতো। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।’
জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানোর পর অসুস্থদের হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছি। আর কি কারণে এমনটা হচ্ছে সেই বিষয় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
No comments